পঁচিশ বছর! একটি ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে একজন খেলোয়াড়ের সম্পর্ক এমন দীর্ঘ, গভীর ও আবেগঘন হয় কজনের? বায়ার্ন মিউনিখের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড থমাস মুলার সেই বিরল উদাহরণ। ২০০০ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে বায়ার্নের যুব একাডেমিতে পা রাখা এই জার্মান তারকা ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি মৌসুম শেষেই তিনি বিদায় নেবেন ক্লাব থেকে। তার এই ঘোষণায় কেবল বায়ার্ন নয়, কেঁদে উঠেছে গোটা ফুটবল দুনিয়া।
৩৫ বছর বয়সী মুলার বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন এক আবেগঘন বার্তায়। ক্লাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আজকের দিনটা আর দশটা দিনের মতো নয়। বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে আমার ২৫ বছরের যাত্রা এই গ্রীষ্মে শেষ হতে যাচ্ছে। এটা ছিল এক অবিশ্বাস্য পথচলাÑঅসংখ্য স্মরণীয় লড়াই, অনন্য অভিজ্ঞতা আর ঐতিহাসিক সব সাফল্যের সাক্ষী আমি। এই ক্লাবের হয়ে খেলতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব।”
২০০৮ সালে মূল দলে অভিষেকের পর থেকে বায়ার্নের জার্সিতে মুলার খেলেছেন রেকর্ড ৭৪৩টি ম্যাচ। এই দীর্ঘ যাত্রায় তার ট্রফিকেসে জমা পড়েছে ৩৩টি শিরোপাÑযার মধ্যে আছে ১২টি বুন্দেসলিগা, ৬টি জার্মান কাপ, ৮টি জার্মান সুপার কাপ, ২টি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ।
মুলার শুধু ক্লাবেরই নন, জার্মান ফুটবলেরও এক অমূল্য সম্পদ। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন তিনি, করেছেন গুরুত্বপূর্ণ গোল, লড়াই করেছেন সামনে থেকে। ক্লাব ও দেশের হয়ে তার গোলসংখ্যাও ঈর্ষণীয়Ñবায়ার্নের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় তিনি আছেন তৃতীয় স্থানে, গোলসংখ্যা ২৪৭। তার উপরে আছেন কেবল রবার্ট লেভানডোভস্কি ও কিংবদন্তি জার্ড মুলার।
বায়ার্নের সভাপতি হার্ভার্ট হাইনার মুলারের বিদায়কে অভিহিত করেছেন "এক বাভারিয়ান রূপকথার সমাপ্তি" হিসেবে। তার ভাষায়, “থমাস মুলার মানেই বায়ার্ন মিউনিখের আত্মা। বাভারিয়ায় জন্ম, বায়ার্নে বেড়ে ওঠাÑআসলে মুলারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, কীভাবে একজন খেলোয়াড় ক্লাবের ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে।”
তবে এই বিদায়ের পেছনে আছে এক নির্মম বাস্তবতাও। মুলার নিজেই জানিয়েছেন, তিনি চেয়েছিলেন ক্লাবের সঙ্গে আরেকটি মৌসুম খেলতে, কিন্তু বায়ার্ন চুক্তি নবায়ন করেনি। মুলার বলেন, “এটা আমার ইচ্ছার সঙ্গে মেলে না ঠিকই, কিন্তু আমি ক্লাবের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই।”
তবে বিদায়ের আগে আরও একবার মুলারকে দেখা যাবে বায়ার্নের জার্সিতে। জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ক্লাব বিশ্বকাপ হবে তার শেষ মঞ্চ। সেখানেই শেষবারের মতো লড়বেন ‘নিজের ক্লাবের’ হয়ে, গর্বিতভাবে বুক চিতিয়ে।
এদিকে চলতি মৌসুমেই বায়ার্ন চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে, আর বুন্দেসলিগার শীর্ষে থাকা দলটি শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে। বিদায়ী উপহার হিসেবে মুলার কি পারবেন আরেকটি ট্রফি উপহার দিতে ক্লাবকে?
এটাই এখন ফুটবলপ্রেমীদের নতুন কৌতূহল। কোথায় যাচ্ছে মুলার? অবসর, নাকি নতুন ক্লাবে নতুন পথচলা? তা এখনও নিশ্চিত করেননি এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড। তবে যেখানেই যান না কেন, থমাস মুলার নামটি বায়ার্ন মিউনিখের ইতিহাসে চিরকালই থাকবে উজ্জ্বল, শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবেÑএক রূপকথার নাম হয়ে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

২৫ বছরের সম্পর্কের ইতি, বায়ার্ন ছাড়ছেন মুলার
- আপলোড সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০৬:৪৬:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০৬:৪৬:০৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ